ভ্যাক্সিন ও ওমিক্রন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু

বিশ্বব্যাপী মহামারীর সর্বশেষ  করোনার যে নতুন রূপের সংক্রমণ সবাইকে ভাবাচ্ছে ইতিমধ্যে সবার জানা হয়ে গেছে তার নাম ওমিক্রন।

এবং এই ওমিক্রন যে গতানুগতিক ভ্যাক্সিন এ খুব একটা কুপোকাত হবে না তা ইতিমধ্যেই ইউরোপ আমেরিকার দেশ গুলোতে দেখা যাচ্ছে, এমন কি সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী ওমিক্রন দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক সংক্রমিত হবে বলেও উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

যদিও  আমেরিকার চিকিৎসক ও গবেষক সমপ্রদায় তাদের একটি গবেষনায় এরূপ বলেছেন যে করোনার বুস্টার ডোজ এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে যদিও তার হার শতকরা ৭৫ ভাগ। এখানে বলে রাখি এটা একটা সীমিত পরিসরে গবেষণায় পাওয়া গেছে, এবং কার্যকর ও কার্যকারিতা একি জিনিস নয়, যদিও যুক্তি বিবেচনায় এই ডোজ কোন কাজ
করবে না যদি ভাইসের গঠনের পরিবর্তন তার সাথে  এন্টিবডির যুক্ত হতে পারার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়ার কথা। যার সাথে কিনা ডক্টর এন্থনি কারডিলো,   যিনি কিনা লস এঞ্জেলস এর একটি হস্পিটাল এর একজন ই আর স্পেশালিস্ট এবং সি ই ও, তিনিও একমত। যাই হোক আগের সব করোনার চাইতে এই ওমিক্রন  এর যে সংক্রামিত হওয়ার ক্ষমতা অনেক বেশী তাই বিশ্বব্যাপী সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে, যদিও এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক কম  এবং  রোগের লক্ষন সমুহ অনেক ক্ষেত্রেই মৃদু, তারপরেও এটি রোগীকে যথেষ্ট পরিমানে দুর্বল করতে সক্ষম। এছাড়া বরাবরের মতই জ্বর, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, গন্ধহ্রাস ও ক্ষুধামন্দা হতে পারে কিছুটা মাঝারি পর্যায়ে, পেটে ব্যথা, বমি ভাব,  গলা ব্যথা, কাশি, ডায়রিয়া সবি হতে পারে,  কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে শুধু পুরোপুরি ক্ষুধা হীনতা দেখে দিতে পারে, রোগী কিছুই খেতে চাইবে না।

অনেকে এটাকে ঠান্ডা মৌসুমের সাধারন কোল্ড ফ্লু এর এক প্রকার হিসেবে বর্ননা  করেছেন কারন এর সাথে গবেষনায় অনেক  সাদৃশ্য পাওয়া গেছে, তাই ওমিক্রন নিয়ে তারা এতটা চিন্তিত হতে নিরুৎসাহিত করেছেন।

যাই হোক, শত হলেও মহামারী চলছে এবং মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই তাই এই ভাইরাস থেকে বেচে থাকতে আগের মতোই পরিচ্ছন্নতা ও সাবধান থাকে, মাস্ক ব্যবহার করা, জনসমাগন এড়িয়ে চলাই আপাতত  হতে পারে অনেকটা প্রতিরোধের কার্যকর উপায়।

আর সবার উপরে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া চাওয়া যার তরফ থেকে এই মহামারী  এসেছে,  আজকে কুরানের  বর্নীত এক ভ্যাক্সিন এর কথা বলব যা কিনা যে কোন মহামারীর থেকে বাচার অন্যতম উপায়। এটি বর্নীত হয়েছে প্রখ্যাত শাইখ সাঈদ ইবনে আলী ইবনে ওয়াহফি আলকাহতানী রহমতুল্লাহ এর প্রসিদ্ধ  এলাজে কোরআনী বইটিতে।
এটা হচ্ছে সুরা ইয়াসিনের ৫৮ নম্বর আয়াত। এটা প্রতিদিন ২৭ বার তিলাওয়াত করলে যে কোন মহামারী থেকে নিরাপদ থাকবে।
যেখানে বলা হয়েছে -| سَلٰمُ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِیْمٍ …
 সালামুন কাওলাম মির রাব্বির রাহীম। 
অর্থঃ পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবে সালাম। ইবনে যুরাইয রহমতুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিঃ হতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায়  বর্ণিত করেছেন আল্লাহ নিজেই শান্তি, তার পক্ষ থেকে তিনি নিজেই জান্নাতিদের উপর শান্তি বর্ষিত করবেন। ( তাফসির ইবনে কাসির)

এখন এই আয়াতে মুলত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, এখানে সালাম শব্দটি এসেছে যা একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে শান্তি, নিরাপত্তা। আল্লাহ পাকের নাম আস সালাম যার মানে তিনি শান্তিদাতা,  নিরাপত্তা দান কারি। এই আয়াতে সেই সময়ের কথা বলা হয়েছে যখন জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের কে সম্মানিত করা হবে এবং নিরাপত্তা ও চিরস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা হবে এ সালাম শব্দের মাধ্যমে যেটার হুবহু অনেক আয়াত আছে যার মাধ্যমে এটাই বোঝা যাবে যে এই সেই সুসংবাদ যে জান্নাতিরা প্রকৃত সফলতা লাভ করেছে , তাদের আর কোন দুঃখ,  চিন্তা, কষ্ট থাকবে না, কোন রোগ,  জরা, মহামারী তাদেরকে স্পর্শ করবে না, তাদের মৃত্যু আসবে না। যে কারনে এই আয়াত পাঠের ফযিলত হিসেবে  দুনিয়াতেই সকল মহামারি, রোগ শোক থেকে নিরাপত্তা  ও শান্তির আশ্বাস রয়েছে। এই জন্য আমাদের উচিত পবিত্র কুরয়ান শরীফ বেশি বেশি অনুবাদ সহ পাঠ করা ও তার প্রকৃত তাফসীর জানা। এখানে কিয়ামত পর্যন্ত সকল সমস্যার সমাধান আছে, যদিও পাঠ করার সাথে পরিপূর্ণ ঈমান পূর্বশর্ত যদি সঠিক ফল  পেতে চান।

 কুরআন মাজীদে এরকম মোট সাত জায়গায় সাতটি সালাম শব্দ আছে। এগুলোকে আয়াতে সালাম বলা হয়। এগুলোর ফযীলত হচ্ছে, যারা সকাল সন্ধ্যা এ আয়াত পাঠ করবে তারা আল্লাহর রহমতে সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাবে।

আয়াতগুলোর বাংলা উচ্চারণ ও কোন কাজের ক্ষেত্রে কোন আয়াত পাঠ করতে হবে তা নিচে বর্ননা করা হলোঃ

(১)  পূর্বে বর্ণীত সুরা ইয়াসিনের ৫৮ নুং আয়াত।

(২) সালামুন আলা নূহিন ফিল আলামীন। সমগ্র বিশ্বের মধ্যে নূহের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক! (সাফফাতঃ ৭৯)

(৩) সালামুন আলা ইব্রাহীম। ইবরাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক! (সাফফাতঃ ১০৯)

(৪) সালামুন আলা মূসা ওয়া হারুন। মূসা ও হারূনের প্রতি সালাম। (সাফফাতঃ ১২০)

(৫) সালামুন আলা ইলইয়াসিন। ইল-ইয়াসীনের উপর শান্তি বৰ্ষিত হোক। এই আয়াতগুলি তেলায়াতে তাদের প্রতি শান্তি ও নিরাপত্তা বর্ষিত হয়। (সাফফাতঃ ১২০)

(৬) সালামুন আলাইকুম তিবতুম ফাদখুলুহা খালিদুন। (ফুরকানঃ ৬৩) চরিত্র সংশোধন ও কথা কাজ সুন্দর হওয়ার জন্য এ আয়াত পাঠ করুন।

(৭) সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর। শান্তিময় সে রাত, ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত। (কদরঃ ৫) আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় পাওয়ার জন্য এ আয়াত পাঠ করুন।

সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু শান্তিই শান্তি, মঙ্গলই মঙ্গল তথা কল্যাণে পরিপূর্ণ। সে রাত্র সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত।

সালাম এর উপকারিতা এত ব্যাপক যে ইসলামে ছোট বড় সবাইকে সালাম দিয়ে দোয়া করা হয় যাতে শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

পরিশেষে,  মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট পার্থ্যনা আল্লাহ পাক যেণ আমাদের সবাইকে এই মহামারী থেকে নাযাত দান করেন, আমাদের ক্ষমা করেন এবং প্রকৃত সত্য ও সুন্দর পথের পথিক করেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা দান করেন।

ওয়াসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *