ছেলে বয়স ৭ পেরিয়ে ৮, এখনো রাতে বিছানা ভেজায়, মা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সাথে ঘর ও সামলাতে হয়, বাচ্চার এই সমস্যা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন, শাশুড়ী কোন ভাবেই সমস্যার সমাধান না পেয়ে শিশুটিকে তাবিজ দিতে চাচ্ছেন, কি করবেন?? অনেকেই এই প্রশ্ন করে থাকেন তাই আজ তাদের জন্য কিছু চমৎকার আলোচনা রইলঃ
অধিকাংশ মায়েদেরি এই সমস্যাটি নিয়ে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়, বাচ্চা বড় হয়ে গেছে তবু প্রতিদিন রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে। আসলে বেশীর ভাগ সময়েই এটি খুব সাধারণ সমস্যা যা নিয়ে খুব বেশী উদ্বেগ এর তেমন কোন কারন নেই।আজকে এই সমস্যার কিছু সুন্দর সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হল।
সাধারণত ২_৪ বছর বয়সেই বাচ্চাদের টয়লেটের প্রশিক্ষন হয়ে যায়। তবুও কিছু বাচ্চা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে তবুও রাতে বিছানা ভেজাচ্ছে, যে খানে একি বাসার সমবয়সী অন্য বাচ্চাটি সহজেই রাত শুকনো ভাবে পার করছে। আসলে এই বাচ্চা গুলোই যখন ৫ পেরোয় তখনি শতকরা ৮৫ শতাংশ ঠিক হয়ে যায়, এর পর ও দেখা যায় কিছু বাচ্চা এর পরও প্রায়শই বিছানা ভিজাচ্ছে।যদি ও কিছুদিনের পরি এরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠে।
এখন যদি সমাধান খোজেন তবে আপনাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুজে পেতে হবে যেমন ধরুন
১, এটা কি বংশগত কিনা, কেননা যে বাচ্চা বিছানা ভেজায় তার বাবা ও ছোট বেলায় একি কাজ করার হিস্ট্রি থাকতে পারে।
২। বাচ্চা কি দেরীতে ঘুমায় এবং রাতের খাবার কি দেরী তে খাচ্ছে কি না করে।
৩। রাতে ঘুমানোর আগে পানি খাচ্ছে কিনা।
৪। বাচ্চার প্রশাবে ইনফেকশন বা মুত্র নালীতে কোন জটিলতা আছে কিনা, যেমিন প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া, ব্যথা এগুলো আছে কজনা
৫। বাচ্চা দিনের বেলায় কয়বার প্রসাব করে এবং কতক্ষন প্রশাব ধরে রাখতে পারে।
৬।বাচ্চাটি এমন কোন খাবার বা পানীয় খাচ্ছে কিনা যা মুত্র বর্ধক হিসেবে কাজ করে।
৭। পরিবারে বা স্কুল থেকে কোন শারীরিক বা মানসিক চাপ পড়ছে কিনা।
৮। শিশুটি আগে থেকেই রাতে বিছানা ভেজাতো নাকি নতুন করে এটা ঘটছে কিনা।
৯। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য বা constipation এ ভুগছে কিনা।
এখন আসুন জেনে নেই সহজ কিছু সমাধান, যেগুলো নিয়মিত মেনে চললে অচিরেই আপনি মুক্তি পেতে পারেন
*হতাশ হবেন না এবং শিশুর এসব কাজে তাকে হেয় বা দোষারোপ করতে যাবেন না।
- বাচ্চার খাবারের সময় বদলে ফেলুন, রাতে গুমাতে যাবার ২ ঘন্টা আগে রাতের খাবার দিন এবং খাবার শেষ করেই একবার এবং ঘুমাতে যাবার আগে একবার প্রসাব করিয়ে নিন।
*রাতে পানি খাবার পরিমাণ সীমিত করুন।এবং মুত্র বর্ধক কোন পানীয় পাবে বিরত রাখুন।
- বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য বা constipation থাকলে তার চিকিৎসা করান।
- একটা আলার্ম এর ব্যবস্থা করুন যখন সাধারনত সে বিছানা ভেজায় এবং চেষ্টা করুন সে সময়ে সে যেন বুঝতে পারে যে (মুত্রথলি বা ব্লাডার ফুল হয়ে গেছে) প্রসাব করতে হবে।
* রাতে শিশুর বিছানায় প্লাস্টিকের শীট বা urine mat ব্যবহার করুন।
- বাচ্চাকে বার বার ঘুম থেকে তুলে প্রশাব করাতে যাবেন না এতে বাচ্চার মস্তিষ্কের উপর খারাপ প্রভাব পরে।
- সকালে ৬ ঘন্টা টানা ঘুমানোর পর বাচ্চাকে তুলে প্রসাব করিয়ে নিতে পারেন।
- দিনের বেলায় বেশীক্ষন প্রশাব ধরে রাখার প্রশিক্ষণ দিন।
- আর এ সমস্যা নতুন মনে হলে বা প্রসাবে ইনফেকশন বা কোন সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নিন।
- মনে রাখবেন যে এটি খুবি সাধারন একটি সমস্যা, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর বাচ্চারা এটি সহজেই কাটিয়ে উঠে তাই নিজেকে ভরসা দিন এহং পরিবারের বাকিদের আশ্বস্ত করুন কেননা মাই হচ্ছে বাচ্চার সবচেয়ে বড় বন্ধু এবং নিরাপদ আশ্রয় স্থল।
ওয়াসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
ওয়েব লেখক ও গবেষক
ডক্টর এইস হাসান
ডক্টরিংস হেলথ কেয়ার।