ব্লাইটেড ওভাম বা এনইম্রায়োনিক প্রেগ্ন্যান্সি কি আসলে?
অনেকেই এই শব্দ গুলোর সাথে অপরিচিত কেননা এটা একটা মেডিক্যাল টার্ম।মা হওয়া নারী জীবনের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগময় আনন্দের অধ্যায় কিন্তু অনেক সময় গর্ভপাতের মত দুর্ঘটনা এ আনন্দকে বিষাদের কাল অধ্যায় এ রুপান্তরিত করে। কিন্তু সেটা যদি এমন হয় যে ভ্রুন ছাড়াই আপনার গর্ভধারণ এর সব লক্ষন প্রকাশিত হল এবং প্রেগন্যান্সি টেস্ট যেটা কিনা HCG হরমোন নির্ণয় করে তাও পজিটিভ পেলেন, কিন্তু আদতে গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা (যেটা থেকে প্রেগ্ন্যাসির হরমোন নির্গত হয়)বাদে আর কিছুই পাওয়া গেল না এটাই হচ্ছে ব্লাইটেড ওভাম।
অনেকেই এটা বিশ্বাস করে যে এসব ঘটনার সাথে জীন জাতীয় অতিপ্রাকিত শক্তি জড়িত এবং প্রায়ী শোনা যায় তারা এভাবে বলে যে বাচ্চা জ্বীনে খেয়ে ফেলেছে। যাই হোক এসব ঘটনা মা হতে যাওয়া নারীকে অনেক বেশী মানসিক কষ্টে ফেলে এবং হঠাৎ করে আনন্দের ঘটনা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ব্লাইটেড ওভামের লক্ষনগুলো কি কি?
প্রথমেই বলে নেই প্রেগন্যান্সির যে হোম ইউরিন টেস্ট যা কিনা বাসায় পরিক্ষাতেই ধরা পড়ে তা অনেক তাড়াতাড়ি পজিটিভ আসে এমনকি পিরিয়ড এর সম্ভাব্য তারিখ পার হওয়ার এক দিনের মধ্যেই পজিটিভ হয়, এবং গর্ভধারণ এর সাধারণ লক্ষন গুলো বমি বমি ভাব, অবসাদ, মাথা ঘোরা সহ সকল লক্ষন প্রকাশ পায়। কিন্তু আল্ট্রাসাউন্ড এ gestational sac পাওয়া গেলেও ১২ সপ্তাহ পরেও বাচ্চার হার্টবিট বা অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। যেটাকে মিসড এবরশোন ও বলা হয়ে থাকে।
ব্লাইটেড অভাম কেন হয়?
ব্লাইটেড ওভাম এখন প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। কেন ঘটে এমন তার মূল কারন একটি নয় বলে দাবী করা হয়।
গবেষনায় বলা হয় যে মুলত জীনগত ত্রুটি বা এবনরমাল ক্রোমোজম এর জন্য দায়ী।যে কারনে নিষিক্ত ডিম্বাণু পরিপূর্ণ ভ্রুন এ পরিণত হয় না বা জরায়ুতে ( absorp)মিশে যায়, তাই খালি স্যাক (empty embryonic sac) পাওয়া যায়।
পুনশ্চ:
লোক সমাজে যে অতিপ্রাকৃত শক্তি বা জীন জাতির কারসাজির কথা প্রচলিত আছে তা একেবারে হেসে উড়িয়ে দেয়া যায় না, কেননা সাম্প্রতিক একজন রোগী পাওয়া গেছে যে কিনা এমনি প্রেগ্ন্যাসির ঠিক আগ মূহুর্তে জীন দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এমনকি সেই জীন তার কখনই বাচ্চা হতে দেবে না বলে দাবী ও করে,এবং সেই প্রেগ্ন্যাসি ব্লাইটেড ওভাম এ রুপান্তরিত হয়।
বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, হয়ত এক সময় জীন জাতীর অস্তিত্ব ও প্রমানিত হবে বিজ্ঞান দ্বারা।
চিকিৎসা কি এর?
যেহেতু গর্ভধারণ হলেও ভ্রূন এর অস্তিত্ব থাকে না এক সময় রক্তপাত বা তল পেটে ব্যথা অনুভব হতে থাকে এবং রক্তপাতের মাধ্যমে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহে গর্ভপাত ঘটে এবং গর্ভপাতের পর গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা পাওয়া গেলেও বাচ্চার কোন অংশ পাওয়া যায় না, অনেক সময় পরিপূর্ণ ভাবে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য হাস্পাতালে ভর্তির এমনকি অপারেশন এর প্রয়োজনও ঘটে।স্বাভাবিকভাবে বা মেডিসিনের দ্বারাও গর্ভপাত ঘটে বা ঘটানো হয় তবে তা অবশ্যই রেজিস্ট্রার চিকিৎসক এর দ্বারা যেন হয় তা নিশ্চিত করা।
ব্লাইটেড ওভাম এর কতদিন পর পূনরায় গর্ভধারণ করা যায়?
এক মাস পিরিয়ড মিস হওয়ার পর কেননা জরায়ু স্বাভাবিক হতে এবং আগের কোন জটিলতা এড়াতেই এই সময়টা দেয়া উচিত আর এটাও বলা হয় এরকম ঘটনার পর্বরতী ৬ মাসের মধ্যেই বাচ্চা নিলে সফল গর্ভধারণ ঘটে ও জটিলতা কম হয়।
এই জন্যই প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস সতর্কতারর সাথে এক মাত্র আল্ট্রাসাউন্ড তিন মাস পর করেই গর্ভধারন নিশ্চিত করা উচিৎ আর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর ভরসা ও দোয়া করা উচিৎ আল্লাহ পাক যেন এ সময়টা সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন এবং এমন ঘটলে বিষন্নতা কাটিয়ে উঠে আবারো চেষ্টা করা উচিৎ আর আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করা উচিৎ কেননা সামান্য পায়ে কাটা ফোটার বিনিময়েও তিনি সওয়াব দিয়ে থাকেন।
ওয়াসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাহ্ মাতুল্লাহ।