ব্লাক ফাংগাস (Black fungus/Mucor Mycosis)

ব্লাক ফাংগাস (Black fungus/ Mucor Mycosis)সম্পর্কে যে তথ্যগুলো আপনার জানা প্রয়োজনঃ

সাম্প্রতিক সময়ে যে সমস্যা কোভিড পরবর্তী জটিলতা  হিসেবে  অনেক আলোচনায় এসেছে তা হচ্ছে ব্লাক ফাংগাস, বিশেষ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এর প্রচুর সংক্রমণ ও পরবর্তীকালে অনেক মৃত্যুর ঘটনায় সবাই কম বেশী নড়ে চড়ে উঠেছে।এর আগ পর্যন্ত কোভিড এর চিকিৎসায় স্টেরয়েডের বেপরোয়া ব্যবহার অনেক খানেই দেখা গেছে। যদিও এ কথা বলার
কোন অবকাশ নেই যে জীবন বাচানোয় স্টেরয়েড যে  বিশেষ ভুমিকা রয়েছে তা কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ও প্রমানিত হয়েছে।

তবে এখন অনেকেই কোভিড চিকিৎসায় স্টেরয়েডের ব্যবহার এ আগের চেয়ে সচেতন হয়েছেন এবং আশা করি ভবিষ্যতে আরও  সচেতন হবেন ইনশাআল্লাহ।

এই ব্লাক ফাংগাস যা Mucor Mycosis নামে পরিচিত এই ছত্রাকটি অনেক সময়েই আমাদের প্রকৃতিতে দেখা মেলে। সাধারণত বাতাসেই ঘুরে বেড়ায় এর স্পোর আর আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে সহজেই শরীরে ঢুকে পরে আবার যারা বাগানে বা ক্ষেতে কাজ করেন তাদেরও সহজেই সংস্পর্শে আসে এই ছত্রাক। কিন্তু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় আল্লাহর অসীম রহমতে খুব একটা সমস্যা করতে পারে না। কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এই ছত্রাক সহযেই আক্রমণ করে বসে। তাই একে সুযোগ-সন্ধানী  বা opportunistic fungus হিসেবে পরিচিত।
এই ছত্রাকটি আক্রান্ত স্থানে রক্তনালী বন্ধ করে দিয়ে আক্রান্ত স্থানে পচন ধরে কাল হয়ে যায় বলেই এর নাম ব্লাক ফাংগাস বলে পরিচিত।  কিন্তু এটি ছোয়াচে নয় বা খুব বেশী অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তশুন্যতা বা অতিরিক্ত আয়রন,  ক্যান্সার, এইচ আই ভি সংক্রমণ, অংগ প্রতিস্থাপন,  সার্জারী,  বা যে কোন কাটা ছেড়া  বা চর্মরোগ বা সংক্রমণ, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপরিকলপ্তিত স্টেরয়েড এর যত্র তত্র ব্যবহার, পুষ্টিহীনতা ও সঠিকভাবে শাক-সব্জি ও মাছ মাংস ধোয়া বা রান্না না করার মাধ্যমে এই সুযোগ সন্ধানী সহযেই সুযোগ পেয়ে সংক্রমণ বিস্তার করতে পারে মানব শরীরে।

আপনি সহজেই একটি ছোট্ট  পরীক্ষার মাধ্যনে বুঝে যেতে পারেন আপনার আশে পাশেই বা ঘরে এই ছত্রাকের বসতি  আছে কি না। পাকা পেপে  ঘরে কেটে ফেলে রাখুন বা ফ্রিজে রেখে দিন বা পাউরুটি খোলা রেখে দিন।  কিছুদিনেই দেখবেন কালো ছত্রাক এর এক আস্তরণ উপরে পড়েছে। এই হচ্ছে সেই ব্লাক ফাংগাস ।

সংক্রমণ থেকে বেচে থাকতে কি করবেন??

কোভিড  থেকে বেচে থাকতে যা যা করতে বলা হয়েছে যেমন পরিচ্ছন্নতা, হাত ধোয়া এক নম্বরেই থাকবে। আপনার ঘর বাড়ি বাগান সবকিছু পরিষ্কার রাখুন এবং এর জন্য অল্প কিছু ওয়াশিং পাউডারি যথেষ্ট,  অতিরিক্ত জীবাণুনাশের ব্যবহারে সংক্রমণ বাড়বে বই কমবে না।

ফ্রীজের বাসি খাবার ফেলে দিন এবং পানি জমতে দেবেন না, এবং ওয়াশিং পাউডার দিয়ে মুছে ফেলুন।

পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস ঘরে প্রবেশ করাতে হবে।

বাগান বা ক্ষেতে কাজ করার সময় গ্লাভস ও সুরক্ষা পোষাক ব্যবহার করুন এবং পরে কাজ শেষে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।

ঘর বাড়ি, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখুন, স্যাতস্যাতে ও শেওলা জায়গা থেকে দূরে থাকুন। খালি পায়ে হাটা হাটি করবেন না।

ডায়াবেটিস রোগী, রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং বাগানে  কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

নির্ভরযোগ্য চিকিৎসক ছাড়া কারো প্রেসক্রিপশনে স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

যেখানে ছত্রাকের সংক্রমণ আছে সেখানে ঘ্রান বা শ্বাস না নিয়ে আগে পরিষ্কার করে ফেলুন, ফেলে দিতে না চাইলে  আক্রান্ত অংশ খাবার থেকে কেটে বাদ দিন, এবং  পর্যাপ্ত রান্না না করে কোন খাবার খাবেন না।

পর্যাপ্ত আমিষ ও আয়রণ সম্মৃদ্ধ খাবার ও ফল মূল গ্রহন করুন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  বাড়ায় এমন খাবার ও ফল মূল গ্রহন করুন।

এই ছত্রাক দ্বারা  সংক্রমণের লক্ষন সমূহ কি কি?

জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট,  নাক বন্ধ,  সাইনাস এর সমস্যা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, রক্ত বমি, বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, শরীরের যে কন আক্রান্ত স্থান লাল, ফোস্কা, ফুলে উঠা, বা পড়ে কাল হয়ে যাওয়া বা গরম ও ব্যতগা ভাব, চোখে ঝাপসা ও দৃষ্টীশক্তি কমে যাওয়া এমনকি অন্ধত্ব।  মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে কমা থেকে মৃত্যু ও ঘটে।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ: যত তাড়াতাড়ি এটা নির্নয় করা যাবে তত তাড়াতাড়ি প্রতিকার ও প্রতিরোধ  সম্ভব। এন্টিফাংগাল ইঞ্জেকশন ও এন্টিবায়োটিক প্রয়োজনে একমাত্র চিকিৎসা। দেরী হয়ে যে কোন জায়গা পচন ধরে গেলে আক্রান্ত  স্থান কেটে ফেলে দিতে হবে পরবর্তী সংক্রমণ  ঠেকাতে।

ক্হারোনা মহামারী না যাওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকুন, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন, জনসমাগম এড়িয়ে চলুন, সচেতনতা এবং সতর্কতাই এর একমাত্র প্রতিরোধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *