মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত।
মানুষকে আল্লাহ পাক দুনিয়াতে সমস্ত কিছুর চেয়ে সুন্দর, সাবলীল ও জ্ঞানসম্পন্ন করে পাঠিয়েছেন আর সব কিছু কে মানুষের
কল্যানের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। সৃষ্টীর সমস্ত জীবের প্রতি সদাচারণ যেমন করতে বলা হয়েছে তেমনি সে দিক থেকে
মানুষ সৃষ্টির সেরা হওয়ায় মানুষের প্রতি সদাচরণ সবচেয়ে বেশী হওয়াটাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
কিন্তু অর্থ, ক্ষমতা ও ধর্মীয় জ্ঞান ও মূল্যবোধের অভাব মানুষকে তার সাধারণ বিবেচিনা ও বিবেকবুদ্ধির নাশ ঘটায়। যার জন্য সে মানুষকে মানুষ বলে বিবেচনা করেই না বরং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষমতাহীন, অসহায়দেরকে কুকুর বিড়ালের চেয়েও অধম মনে করে এবং রাস্তার কুকুর – বিড়ালের চেয়েও নিকৃষ্ট আচরণ তাদের সাথে করে এবং তাতে বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও বোধ করে না।
উদাহরণ সরূপ খুব প্রচলিত একটা জোকস বলি, এক লোক তার বউ এর উপর বিরক্ত তো সে বউ কে পছন্দ করে না বিধায় তাকে শাস্তি দেবে। উছিলা সরূপ বাসার সাম্নের উঠানে যে কুকুরটি ঘুমিয়ে আছে তাকে বালিশ কেন দেয়া হলনা এই বলে বেদম প্রহার শুরু করলো। এই টা সমাজের প্রচলিত একটি কৌতুক যা সবার জন্যই মনোরনঞ্জক।
এখন আসুন কেন লোকটী এমন করলো তার ভাল বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। যার প্রথম ব্যাখ্যা হল লোকটী সম্পর্কে সুধারণার চেষ্টা করি। সে কুকুরটাকে অনেক ভালোবাসে তাই সে কুকুরকে বালিশ ছাড়া ঘুমাতে দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিল তাই নিজের স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে ফেলল। তার জীব জন্তুর প্রতি অগাধ ভালোবাসা। কিন্তু আসলেই এই ভালোবাসা কি আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় হচ্ছে??
দ্বিতীয়ত, আসলে লোকটী স্ত্রীর উপর কোন কারনে বিরক্ত তাই সে এমন আচরণ করে বসল, মানে ঝিকে মেরে বউ কে শেখাণো।
কিন্তু লোকটি যদি প্রকৃত অর্থে মানুষ হত এবং নিজে স্ত্রীলোকটিকে মানুষের মর্যাদা দিতো তাহলে তার কিছু উপায় ছিল তার এ সমস্যা সমাধানের। তার সাথে আলোচনায় বসা যেত যে তোমার এই কাজগুলো আমার পছন্দ হচ্ছে না অথবা তোমাকে আমার আর ভাল লাগছে না বা তোমার ব্যয় ভার বহন করতে পারছি না( তালাকের পথ খোলাই আছে যদিও আল্লাহ পাকের কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় যায়েজ কাজ) সে একটা কুকুরকে তার উপর প্রাধান্য দিয়ে তাকে ছোট করার বা অপমানের চেষ্টা করত না।
অহংকার একটি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি। যার জন্য মানুষ নিজেকে এমন ভাবতে শুরু করে তার আশপাশের কাউকে তার চোখে তার সাথে আলোচনারি যোগ্য বলে মনে হয় না। এই অহংকারের কারনেই ইবলিশ কে আল্লাহ পাক বেহেশত থেকে বিতাড়িত করেছেন এবং আল্লাহ পাক তাকে সর্বোচ্চ শাস্তিও দেবেন, টাইটানিক জাহাজের নির্মাতা টাইটানিক বানাতে ৭৫ লাখ ডলার খরচ করেছিল এবং গর্ব করে বলেছিল টাইটানিক কখনোই ডূববে না কিন্তু পরিণতি আমাদের সকলেরি জানা। প্রথম যাত্রাই টেকে নি টাইটানিক, ডুবে গিয়েছিল সমুদ্রের অতল গভীরে। নমরুদ এর মতো দাম্ভিক অহংকারীর মৃত্যু ঘটেছে চল্লিশ বছর নিজেরি মাথায় জুতার আঘাত করে, মশার মত সামান্য প্রানীর যন্ত্রনা সহ্য না করতে পেরে। আর ফিরাউন বলে নিজেকে খোদা দাবী করা অত্যাচারীর মৃত্যু হয়েছিল নীল নদে ডুবে।
করোনার এই কালেও অনেক দাম্ভিক তাদের দাম্ভিকতার দরুন পতন ঘটেছে যেমন্ টি হয়েছে যুক্ত্রাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এবং অনেক ক্ষমতাশীন নেতামন্ত্রীর ও বাদ যায় নি। কেউ হয়েছেন ক্ষমতাচুত্য, আর কেউ সাদা কাফনে মুড়ে বিদায় নিয়েছেন পরপারে।
অহংকার এর কুফল সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস ও আছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে এরশাদ বর্নীত রয়েছে যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, লোকেরা তো চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক। জবাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। কিন্তু ‘অহংকার’ হলো ‘সত্যকে দাম্ভিকতার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা’।
তিনি আরো বলেন, ‘ তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের গ্রাস করবেই। যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের মধ্যে অবস্থান কর।’ (নিসা ৪/৭৮)।
কিন্তু আমরা সবি ভুলে যাই, ভুলে গেছি গতবছর করোনার ভয়াবহতা, অকাল মৃত্যু, লাশের মিছিলের করুণ দৃশ্য। যাদেরকে দাম্ভিকতার সাথে মসজিদ, গার্মেন্টস কেন খোলা, ওয়াজ কেন হচ্ছে, লক ডাউন কেন হচ্ছে না, কেউ স্বাস্থ্যবিধি কেন মানে না বলে অনলাইনে ভাষনের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে, আজ তাদেরি দেখবেন শপিং মলে কিংবা সমুদ্র স্নানে স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করে সেল্ফির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। অথচ গত বছরি তাদের এই লকডাউনের ফলে বাচ্চাকে পরিবারকে খেতে দিতে না পেরে এক বাবা আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল।
তাই সময় থাকতে নিজের প্রতি দয়াশীল হন, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের প্রতি দয়াশীল হোন, সদাচরণ করুন। আর সতর্ক থাকুন।
যাই হোক, আমরা করোনাকে ভুলে গেলেও করোনা কিন্তু আমাদেরকে ভুলে নাই, এত ভাক্সিনের সেল্ফি, ভি সাইনের অনলাইন ছবির বন্যার পরও আজ আবার হাসপাতালের আই সি ইউ বেড গুলো আর ফাকা নেই। আমরা যতই চোখ বন্ধ করে চলি না কেন, করোনা কিন্তু খুবি সজাগ আকাশে বাতাসে, যতদিন না আমরা হাত মুখ ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করার সাথে সাথে অন্তরটাকেও পরিষ্কার না করে নিচ্ছি, মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা না দিচ্ছি, কেবলি নিজের স্বার্থ, ভাল থাকা নিয়ে পড়ে না থেকে সবার কথা, সবার কল্যানে এগিয়ে না আসছি তত দিন এই সব মহামারী বার বার ফিরে আসবে আর আমাদের এই সুখ বিলাসিতা গরীমা সব কিছুকে মিথ্যা প্রমাণ করে দেবে।
মনে রাখবেনঃ অপরকে ছোট করে নিজে কখনোই বড় হওয়া যায় না, অপরকে ছোট করতে গেলে নিজেকেই ছোট হতে হয়, লজ্জিত হতে হয়। তাই মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করুন, মানূষকে ভালবাসতে শিখুন, মর্যাদা দিতে শিখুন।
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।